শীতকালে সান্দ্রতাজনিত কতিপয় সমস্যা ও সমাধান

Share with associates

liquid soap dispenser on basin

শীতকালে তরলের সান্দ্রতাজনিত বেশকিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে লেখার আইডিয়া আমার মাথায় আসলো যখন লিকুইড সোপ রিফিল করতে গেলাম। যথেষ্ট বড় ছিদ্র করা সত্ত্বেও লিকুইডটা যেন কিছুতেই নামছে না। আসলে শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকায় তরলের সান্দ্রতা বেশি থাকে। তরলের সান্দ্রতা ও তাপমাত্রার মধ্যকার সম্পর্কটি নিম্নরূপঃ

η = A + B/T

এখানে, η (ইটা) হলো তরলের সান্দ্রতা এবং T হলো তরলের পরম বা কেলভিন তাপমাত্রা; AB হলো ধ্রুবক। এ ধ্রুবকগুলোর মান তরলভেদে বিভিন্ন হয়। তাপমাত্রা কম হলে B/T রাশিটির মান বেশি হয়। A B উভয়ে ধনাত্মক হওয়ায় সেক্ষেত্রে η এর মান অধিক হয়। একারণেই কম তাপমাত্রায় তথা শীতকালে যেকোনো তরলের সান্দ্রতা বেশি থাকে; সেটা লিকুইড সোপ হোক অথবা কনডেন্সড মিল্ক হোক। নিম্নের ভিডিওটি দেখুন, কীভাবে কনডেন্সড মিল্কের সান্দ্রতা কমানোর জন্য একে আগুনের পাশে রেখে তাপ দেওয়া হচ্ছে।

নারিকেল তেল ও নিম্নমানের ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রেও কি একই সমস্যা ঘটে?

নারিকেল তেল ও নিম্নমানের ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সমস্যা কিছুটা ঘটে বটে, কিন্তু শীতকালে এদেরকে নিয়ে অন্য এক প্রকট সমস্যায় পড়তে হয়। এসব তেলের হিমাঙ্ক ও গলনাঙ্ক বেশ কম হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশে শীতকালে বাসাবাড়ির অভ্যন্তরের নিম্ন তাপমাত্রায় এগুলো জমে যায়। ফলে এসব তেল শীতকালে ব্যবহার করা বেশ অসুবিধাজনক। উন্নত মানের ভোজ্য তেল হাইড্রোজেনেটেড করা থাকে, তাই সেগুলোর হিমাঙ্ক তুলনামূলকভাবে বেশি এবং শীতকালের নিম্ন তাপমাত্রায় সেগুলো জমে যায় না।

তাপ দিয়ে ঘনীভূত তেলকে গলানো যায় বটে, তবে কেবল গলে যাওয়ার আশায় কম তাপ দিলে চলবে না। কারণ কোনোমতে গলে গিয়ে থাকলে নিম্ন তাপমাত্রার দরুন তেলের সান্দ্রতা অত্যন্ত বেশি হবে এবং সেটা গড়াতে চাইবে না। তাই অধিক পরিমাণ তাপ দিয়ে তাপমাত্রা অনেকখানি বাড়ানো হয়, যাতে সান্দ্রতা বেশ হ্রাস পায়।

তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে গ্যাসের সান্দ্রতার কীরূপ পরিবর্তন ঘটে?

মজার ব্যাপার হলো, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। যদি সান্দ্রতাকে η দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং পরম তাপমাত্রা T হয়, তবে গ্যাসের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সম্পর্ক প্রযোজ্যঃ

η ∝ √T

এর মানে হলো, শীতল গ্যাস যত দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে, উত্তপ্ত গ্যাস অত দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে না, উচ্চ সান্দ্রতার কারণে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, শীতের কনকনে হিমশীতল হাওয়া কেন এত দ্রুত প্রবাহিত হয়ে আমাদের শরীরে কাঁপন ধরায়। অফিসে এসি‘র সামনাসামনি যাঁরা বসেন, তাঁরাও বিষয়টা হাড়ে হাড়ে টের পান।

কনডেন্সড মিল্কের কৌটার মুখে দুটি ছিদ্র করতে হয় কেন?

can food being heated beside fire

উপরের চিত্রে কনডেন্সড মিল্কের কৌটায় দু’টো ছিদ্র দেখতে পাচ্ছেন? এক গৃহিণীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এ বিষয়ে। সে উত্তর দিলো, যাতে বাতাস ঢোকে এবং মিল্ক ভালো থাকে। আসলে বিষয়টা তা নয়। একটিমাত্র ছিদ্র থাকা অবস্থায় কৌটাটি উপুড় করা হলে মিল্ক বের হতে চাইবে না, বায়ুচাপের দরুন। পানির বোতলের মুখ খুলে উপুড় করা হলে সেখান থেকে একনাগাড়ে পানি পড়ে না। কিছুটা পানি পড়ে, একটু বায়ু ঢোকে, আবার পানি পড়ে, আবার বায়ু ঢোকে – এভাবে চলতে থাকে। একারণেই বোতল থেকে পানি পড়ার সময় ঢোকঢোক শব্দ হয়।

পানির সান্দ্রতা কম হওয়ায় সেটা সম্ভবপর হয়। তবে কনডেন্সড মিল্কের সান্দ্রতা অত্যধিক হওয়ায় সেটা নামতেই চায় না। একারণেই কনডেন্সড মিল্কের কৌটায় দু’টো ছিদ্র করা হয়। একটি ছিদ্রে বায়ু ঢুকলে অপর ছিদ্র দিয়ে মিল্ক বের হওয়া সম্ভব হয়। এতে করে কৌটার অভ্যন্তরে শূন্যতা সৃষ্টি হয় না।

Share with associates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *