নিউটনের গতির ১ম সূত্র (Newton’s first law of motion)

Share with associates

অনেকে এটিকে নিউটনের প্রথম সূত্র বলে থাকেন, যেমনটি বলা উচিত নয়। কারণ ‘গতির ১ম সূত্র’ না বললে সেটা কি মহাকর্ষ সূত্র, নাকি সান্দ্রতার সূত্র নাকি নিউটনের অন্য কোনো সূত্র – সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। তাই শুধু ‘নিউটনের ১ম সূত্র’ না বলে এটিকে ‘নিউটনের গতির ১ম সূত্র’ বলা উচিত।

সূত্রটি হলো – ‘বস্তুর ওপর বাইরে থেকে কোনো বল প্রযুক্ত না হলে এটির স্থিতি বা গতির অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।

বস্তুর ওপর বাইরে থেকে কোনো বল প্রযুক্ত না হলে অথবা একাধিক বল প্রযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও এদের লব্ধি শূন্য হলে নিউটনের গতির ১ম সূত্র প্রযোজ্য হয়। মহাকাশে যেখানে কোনো প্রকার মহাকর্ষ বল নেই, কারণ সেস্থান হতে গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি হয়তো অনেক দূরে অবস্থান করছে, এমন একটি স্থানে ছুটে চলা কোনো ধুমকেতুর গতি বিবেচনা করুন। এর ওপর বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ না করায় এটি সমবেগে চলতে থাকবে, অর্থাৎ সুষম দ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে। তাই এক্ষেত্রে নিউটনের গতির প্রথম সূত্র প্রযোজ্য হচ্ছে। এছাড়া মেঝের উপর স্থির থাকা একটি খেলনা গাড়ির কথাই বিবেচনা করুন। এর ওপর যদিও একাধিক বল প্রযুক্ত রয়েছে (গাড়িটির ওজন এবং মেঝে কর্তৃক প্রযুক্ত উল্লম্ব প্রতিক্রিয়া বল), কিন্তু বলসমূহ পরস্পরের প্রভাবকে নাকচ করে দেয়ায় এদের লব্ধি শূন্য। ফলে এ খেলনা গাড়িটির ক্ষেত্রেও নিউটনের গতির এই সূত্রটি প্রযোজ্য।

প্রতিটি খেলনার ওপর প্রযুক্ত বলসমূহের লব্ধি শূন্য হওয়ায় এগুলো মেঝের উপর স্থির রয়েছে

বল ও জড়তার ধারণা : নিউটনের গতির ১ম সূত্র হতে

নিউটনের গতির ১ম সূত্র হতে বল ও জড়তার ধারণা পাওয়া যায়। বাহ্যিক যে ভাববাচক বিশেষ্যের (Abstract noun) অনুপস্থিতিতে বস্তুর স্থিতি বা গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না, সেটিই হলো বল (Force)। একে খেলনা বলের (Toy ball) সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। বল (Force) স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে সক্ষম, গতিশীল বস্তুর গতিবেগের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এছাড়া বল প্রযুক্ত হয়ে বস্তুর আকার, আকৃতি ও আয়তনের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। গতিবেগের পরিবর্তন ঘটানো মানে এর মান অথবা দিক অথবা উভয়ের পরিবর্তন ঘটানো।

এছাড়া নিউটনের গতির ১ম সূত্র হতে জড়তার ধারণা পাওয়া যায়। জড়তা হলো বস্তুর সেই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যার দরুন বস্তু তার স্থিতি বা গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বাধা দেয়। অর্থাৎ কোনো বস্তুর জড়তা যত বেশি সেটি তার স্থিতি বা গতির অবস্থার পরিবর্তনে তত বেশি বাধা দেবে।

জড়তা দুই প্রকারঃ স্থিতি জড়তা ও গতি জড়তা। স্থির বস্তু তার যে বৈশিষ্ট্যের দরুন এর স্থিতি অবস্থার পরিবর্তনে বাধা দেয়, তাকে স্থিতি জড়তা বলে। অার, গতিশীল বস্তু তার যে বৈশিষ্ট্যের দরুন এর গতিবেগের পরিবর্তনে বাধা দেয়, তাকে গতি জড়তা বলে। স্থিতি জড়তা ও গতিজড়তা যথাক্রমে বস্তুর ভর ও ভরবেগের সমানুপাতিক। কোনো স্থিতিশীল বস্তুর ভর যত বেশি, এটিকে নির্দিষ্ট বেগে গতিশীল করতে তত বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হবে। আর কোনো গতিশীল বস্তুর ভরবেগ যত বেশি, এর গতিবেগের নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিবর্তনে তত বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হবে। ভরবেগ হলো গতিশীল বস্তুর একটি বৈশিষ্ট্য যা বস্তুর ভর ও গতিবেগের গুণফল দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

বলবিদ্যা সম্পর্কিত নিচের আর্টিক্যালটিও পড়তে পারেনঃ

কেন্দ্রবিমুখী বল বলতে কিছু নেই

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে তার ফেসবুক প্রোফাইলে নক করুন অথবা তাঁর +8801534779128 মোবাইল নম্বরে সরাসরি মেসেজ করুন।

Share with associates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *