প্রথমে প্রতিসরাংককে সংজ্ঞায়িত করি। নির্দিষ্ট বর্ণের আলো যখন এক স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মাধ্যম হতে অন্য এক স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মাধ্যমে তীর্যকভাবে প্রবেশ করে, তখন আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাতকে প্রথম মাধ্যম সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাংক বলে। প্রতিসরাংক দুই প্রকারঃ আপেক্ষিক ও পরম প্রতিসরাংক।
যখন আলো শুন্য মাধ্যম থেকে অন্য কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন পরম প্রতিসরাংক বিবেচ্য। আর শুন্য মাধ্যম বাদে অন্য দুটি স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্যে আলোর যাতায়াত ঘটলে, তখন আপেক্ষিক প্রতিসরাংক বিবেচ্য, যেমনঃ পানি ও কাচ।
পরম প্রতিসরাংক সর্বদা ১ অপেক্ষা বৃহত্তর, কিন্তু আপেক্ষিক প্রতিসরাংক ১ অপেক্ষা বৃহত্তর বা ক্ষুদ্রতর হতে পারে। এবার বলা যাক, প্রতিসরাংকের সাথে আলোর বেগের সম্পর্কের বিষয়ে। সম্পর্কটি হলো – ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাংক যত বেশি, তাতে আলোর বেগ তত কম। বিষয়টি পরম ও আপেক্ষিক উভয় প্রকার প্রতিসরাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যেমনঃ কাচের পরম প্রতিসরাংক ১.৫ – এর মানে হলো, কাচে আলোর বেগ শুন্য মাধ্যমের তুলনায় ১.৫ গুণ কম, বা ১.৫ ভাগের ১ ভাগ। আবার, পানির সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাংক ১.১২৮ -এর মানে হলো, কাচের তুলনায় পানিতে আলোর বেগ ১.১২৮ গুণ বেশি। সাধারণভাবে, শুন্য মাধ্যমে আলোর বেগ C এবং অন্য কোনো মাধ্যমে আলোর বেগ Cm হলে, ওই (অন্য) মাধ্যমের প্রতিসরাংক, n = C/Cm.
আবার, a ও b মাধ্যমের পরম প্রতিসরাংক যথাক্রমে na ও nb এবং তাদের মধ্যে আলোর বেগ যথাক্রমে Ca ও Cb হলে, na/na = Cb/Ca. এটাও লক্ষ্যণীয় যে, a মাধ্যমের সাপেক্ষে b মাধ্যমের প্রতিসরাংক n হলে b মাধ্যমের সাপেক্ষে a মাধ্যমের প্রতিসরাংক = 1/n.
উল্লেখ্য যে, শুন্য মাধ্যমের পরম প্রতিসরাংক ১. আরেকটি বিষয় হলো, প্রতিসরাংকের সাথে আলোর রং সংশ্লিষ্ট। কারণ, এক এক রং এর আলোর জন্য নির্দিষ্ট মাধ্যমের প্রতিসরাংক একেক রকম হয়। এক্ষেত্রে বেনীআসহকলা ক্রমটি মনে রাখতে হবে। এই ক্রমে যে রংটি আগে উল্লেখ আছে, সে রং এর আলোর জন্য কোনো মাধ্যমের পরম প্রতিসরাংক বেশি। যেমনঃ লাল রং এর আলোর জন্য এক প্রকার কাচের প্রতিসরাংক ১.৪৮ হলে, বেগুনী রং এর আলোর জন্য হয়তো তা ১.৫২। এছাড়া এটাও মনে রাখতে হবে যে, মাধ্যম পরিবর্তনের সময় বেগুনী রং এর আলো যে পরিমাণ কোণে বাঁক নিবে, লাল রং এর আলো সে পরিমাণ বাঁকবে না।