ফ্যারাডে তাড়িৎচৌম্বক আবেশসংক্রান্ত দুইটি পরীক্ষা করেছিলেন। প্রথম পরীক্ষায় একটি দণ্ডচুম্বককে গতিশীল করে নিকটবর্তী (তড়িৎ উৎসবিহীন এবং কুণ্ডলীযুক্ত) বর্তণীতে তড়িৎচালক বল আবিষ্ট করেছিলেন। দ্বিতীয় পরীক্ষায় তড়িৎ উৎসের মাধ্যমে একটি কুণ্ডলীতে বিদ্যুৎপ্রবাহ ঘটিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি তড়িৎ উৎসবিহীন কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
যে কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ (I) আবিষ্ট হয়, তার রোধ R হলে এতে শক্তি উৎপন্নের হার = I2R . আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, যেহেতু কোনো তড়িৎ উৎসের ব্যবহার ছাড়াই বিদ্যুৎশক্তি পাওয়া যায়, তাহলে এক্ষেত্রে শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি প্রযোজ্য নয়। আসলে ব্যাপারটি তা নয়, তাড়িতচৌম্বক আবেশেও শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি প্রযোজ্য হয় – যা লেঞ্জের সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
২য় বা গৌণ কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহের দরুন এর নিজস্ব চৌম্বকক্ষেত্র উৎপন্ন হবে যার মেরুদ্বয়ের অবস্থান বিন্যাস (orientation) হবে মূল চৌম্বকক্ষেত্র অর্থাৎ ১ম বা মুখ্য কুণ্ডলীর চৌম্বক্ষেত্রের ন্যায় একই বা বিপরীত দিকে। তবে দিকটি সর্বদা এমন হবে যাতে দণ্ডচুম্বকের গতি (যা এক্ষেত্রে তাড়িতচৌম্বক আবেশ ঘটার কারণ) বাধাগ্রস্থ হয়। অর্থাৎ চুম্বককে কুণ্ডলীর দিকে নিতে থাকলে সমধর্মী মেরুদ্বয়ের বিকর্ষণের দরুন এবং কুণ্ডলী হতে দূরে সরিয়ে নিতে থাকলে বিপরীতধর্মী মেরুদ্বয়ের মধ্যকার আকর্ষণের দরুন চুম্বকের গতি বাধাগ্রস্থ হবে। এ বাধা হাতে টের পাওয়া যাবে, যদি হাত দ্বারা চুম্বকটিকে সামনে-পিছনে নেয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কুণ্ডলীটি বদ্ধ (closed) না হলে এতে তড়িৎপ্রবাহ ঘটবে না এবং শক্তিক্ষয়ও ঘটবে না, তখন এতে কেবল তড়িৎচালক বল আবিষ্ট হবে। শক্তিক্ষয় না ঘটায় এরূপ ক্ষেত্রে চুম্বকের অগ্র-পশ্চাৎ গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে না। সুতরাং এই পরীক্ষণে কুণ্ডলীতে যে তড়িৎশক্তি পাওয়া যায় তা মূলতঃ যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তরের ফল। অর্থাৎ তাড়িতচৌম্বক আবেশ শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি মেনে চলে।
ফ্যারাডের দ্বিতীয় পরীক্ষণে গৌণ কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহের দরুন উদ্ভূত চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক মূল বা আদি (অর্থাৎ ১ম কুণ্ডলীর) চৌম্বকক্ষেত্রের বিপরীত হবে। সুতরাং ফ্যারাডে’র উভয় পরীক্ষণে লেঞ্জের সূত্র প্রযোজ্য হয়।