সব শব্দ শোনা যায় না। কোনো শব্দ শোনা যাবে কিনা বা শ্রাব্য হবে কিনা তা নির্ভর করে এর কম্পাঙ্ক ও তীব্রতার উপর। প্রথমে কম্পাঙ্কের কথাই বিবেচনা করি।
কম্পাঙ্কের যে পাল্লার মধ্যে থাকলে শব্দ শোনা যায়, তাকে সংশ্লিষ্ট প্রাণীর জন্য শ্রাব্যতার পাল্লা বলে। সাধারণ মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা 20 Hz হতে 20000 Hz পর্যন্ত। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু মানুষ এই পাল্লার বাইরেও হয়তো দু’-একটি শব্দ শুনতে পায় (কে জানে!)। আফটার অল, পৃথিবীর সকল মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা তো এখন পর্যন্ত মাপা হয় নি। বস্তুতঃ খুব কম সংখ্যক মানুষেরই শ্রাব্যতার পাল্লা আজ পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছে।
এর মধ্যে একজন হচ্ছে আমার শিশুপুত্র ফাইয়াজ। অটিস্টিক হোক (যদিও দেখতে সে অটিস্টিকের মতো নয়) অথবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, সে এখন পর্যন্ত কেবল গুটিকয়েক শব্দ বলতে শিখেছে। তাই আমার বউ তথা শিশু হাসপাতালের ডাক্তারগণ নিশ্চিত হতে চাইলেন, সে আদৌ ঠিকমতো শুনতে পায় কিনা। তখন তার অডিবিলিটি টেস্ট করা হলো মহাখালীর ‘সাহিক’ হাসপাতালে। সেখানে শুধু অডিবিলিটি টেস্ট নয়, বরং ফাইয়াজ সর্বনিম্ন কোন কম্পাঙ্ক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কোন কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়, তার টেস্টও নেয়া হলো।
যাই হোক, যেমনটি বলছিলাম, প্রাণীভেদে শ্রাব্যতার পাল্লা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমনঃ মানুষ সাধারণত 20000 Hz এর বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে না পেলেও কুকুর 35000 Hz পর্যন্ত শব্দ শুনতে পায়। আর বাদুর 100000 Hz পর্যন্ত শব্দ শুনতে পায়। সাধারণ একটি নিয়ম হলোঃ যে প্রাণী যত ছোট সে তত বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাবে। বিপরীতক্রমে, অত্যন্ত অল্প কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে হলে প্রাণীটি তথা এর কান বেশ বড় হতে হবে। যেমনঃ হাতি 20 Hz এর কম কম্পাঙ্কের শব্দও শুনতে পায়।
এবার আলোকপাত করি তীব্রতার উপর। শব্দের কম্পাঙ্ক শ্রাব্যতার পাল্লার মধ্যে থাকলেও যদি এর তীব্রতা অত্যন্ত কম হয়, তবে সে শব্দ শোনা যাবে না। যেমনঃ কানের খুব কাছ থেকে মশার গুনগুন বা প্যানপ্যান শব্দ শুনতে পেলেও একটু দূরে গেলেই সেটা আর আমরা শুনতে পাই না।